খুলনা, বাংলাদেশ | ৩১ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে যুবকের মৃত্যু, আহত ২
  আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন
  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যোগ দিয়েছেন তিন বিচারপতি; অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা
  ৬ মাসের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত শেষ করতে হবে : হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ
দুদকের অনুসন্ধান

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক আমু

গেজেট ডেস্ক

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে তিনি এই অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুদক তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধানে নামে দুদকের গোয়েন্দা শাখা। দুদক জানায়, নামে-বেনামে আমুর বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ পর্যন্ত তাঁর নামে ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তবে প্রকাশ্য অনুসন্ধানে তাঁর অবৈধ সম্পদ অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছে দুদক।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আক্তারুল ইসলাম গতকাল জানান, কমিশন আমির হোসেন আমুর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির তাঁর বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান শুরু হবে।

অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রী থাকাকালে আমু তাঁর নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠি-নলছিটিতে স্কুলের অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিতেন তিনি।

প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদক জানায়, রাজধানীর ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কের কেয়ারী প্লাজায় আমির হোসেন আমুর দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরের রূপনগরে ১ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার একটি প্লট রয়েছে তাঁর। ঢাকার অদূরে সাভারের বাটপাড়া মৌজায় রয়েছে অকৃষিজমি, যার দাম ৪৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ইস্কাটনে একটি বাগানবাড়ি রয়েছে তাঁর নামে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা ও বিনিয়োগ রয়েছে ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর নামে ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

আমুর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে দুদকে, যা প্রকাশ্য অনুসন্ধানে খতিয়ে দেখা হবে।

ঝালকাঠির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঝালকাঠি-খুলনা সড়কের পাশে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজের ক্যাম্পাস বাড়াতে আ. রব ফরাজী ও পারুল বেগম দম্পতির বসতঘর ভেঙে দিয়ে দুই কাঠা জমি আমির হোসেন আমু দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার দাপটে ৩০ লাখ টাকার জমি মাত্র চার লাখ টাকায় নেন তিনি। এ ছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসের সীমানা বাড়াতে স্থানীয় মো. খলিলুর রহমানের দুই কাঠা জমি তিনি দখল করেন। এ জমির বাজারদর ৪০ লাখ টাকা হলেও খলিলুরকে দেওয়া হয় আট লাখ টাকা। একই কায়দায় কলেজের জন্য তিনি রিয়াজুল ইসলাম সোনার ৪০ কাঠা জমি নেন নামমাত্র দামে। এই জমির দাম ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা হলেও তাঁকে ৪৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসএ ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ২.৯৪৫ একর (২৯৫ শতাংশ) জমিতে কালেক্টরেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। অভিযোগ রয়েছে, আমির হোসেন আমু পরে এই জমি দখল করে ফিরোজা আমু টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ এবং ফিরোজা-আমির হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সরেজমিন দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানের স্থানে একটি ভবন পাওয়া গেলেও প্রথমটির কোনো অস্তিত্ব নেই; শুধু একটি নামফলক রয়েছে।

কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষকরা জানান, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ দুর্বৃত্তরা সীমানাপ্রাচীরসহ স্কুল ভবনের অর্ধেক ভেঙে ফেলে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্কুলের নতুন ভবনের ওয়ার্ক অর্ডার হলেও ঠিকাদারকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।

আমুর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে জমি দখলের পাশাপাশি টেন্ডার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের কিছু পদধারীকে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। আমুর সংস্পর্শে থেকে ওই ঠিকাদাররা অনেকে বিদেশে বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, টিআর, কাবিখার বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও আমুকে চাঁদা দিতে হতো। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে স্থানীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত তাঁর সিন্ডিকেট। সরকারি কোনো কর্মকর্তা কথা না শুনলে তাঁকে বদলি করা হতো। শারীরিকভাবেও অনেকে লাঞ্ছিত হন। সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, থানা প্রকৌশল, প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সবখানে ছিল তাঁর সিন্ডিকেট।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে পাঁচ কোটি টাকা পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রোনালস রোডে আমির হোসেন আমুর বাসভবনে আগুন নেভাতে এসে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাগেজভর্তি টাকা দেখতে পান। পরে বিষয়টি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে জানালে তারা এসে লাগেজভর্তি টাকা উদ্ধার করে। ওই দিন থেকে পলাতক আমু। এলাকাবাসী জানান, অবৈধ টাকা লেনদেনে আমুর বিশ্বস্ত ছিলেন তাঁর ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরণ। তিনিও এখন আত্মগোপনে। আমু শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে কিরণ ছিলেন তাঁর এপিএস।

রোনালস রোডের বাসভবন ছাড়াও বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে রয়েছে আমুর আলিশান বাড়ি। ব্যক্তিজীবনে নিঃসন্তান আমু তাঁর শ্যালিকা মেরী আক্তারের এক মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমির হোসেন আমু প্রথমে খাদ্য ও পরে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। আমু ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আর নিজ দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

এর আগে গত আগস্টের মাঝামাঝি আমির হোসেন আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায়। নির্দেশনায় বলা হয়, উল্লিখিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাক‌বে।

লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর ২৬(২) ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে উল্লেখ হয়। চিঠিতে আমির হোসেন আমু ও তাঁর সন্তানের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!